প্রকাশিত: Wed, Jan 11, 2023 7:26 AM
আপডেট: Sun, Jun 29, 2025 2:43 AM

জিনেদিন জিদান এবং ফ্রেঞ্চ ফুটবল ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট নোয়েল গ্রায়েতের মধ্যে দ্বন্দ্ব?

বাতেন মোহাম্মদ

ফ্রেঞ্চ ফুটবল ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট নোয়েল গ্রায়েতের জিদানকে নিয়ে মন্তব্যে আমি খুব একটা আশ্চর্য্য হইনি।  কারণ এই ব্যক্তি এর আগে বেনজেমাকে নিয়েও অত্যন্ত রূঢ় মন্তব্য করেছিলো। এখন প্রশ্ন গ্রায়েতের আসলে জিদানের সাথে কী সমস্যা? বাহ্যিকভাবে কোনো সমস্যা নাই। জিদান ফ্রান্স ফুটবলের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় তারকা। এমনকি বিশ্ব ফুটবলে পেলে ম্যারাডোনার পর জিদান সবচেয়ে বড় তারকা (ভবিষ্যতে মেসি ও রোনালদো অবসর নেওয়ার পর বুঝা যাবে তারা তারকাখ্যাতিতে জিদানকে ছাড়িয়ে যেতে পারে কিনা)। এতো বড় তারকা হওয়ার পরেও গ্রায়েতের জিদানকে নিয়ে মন্তব্য প্রচণ্ড অসহিষ্ণু, সম্মানহীন ও ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দের বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু এটা কি বিচ্ছিন্ন?

একটু অন্যভাবে দেখি। দিদিয়ের দেশম ফ্রান্সকে বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন, ইউরো জিতিয়েছেন কিন্তু পৃথিবীর সব ফুটবলপ্রেমী চোখ বন্ধ করে তাকে পৃথিবীর সেরা কোচ বলে না। কারণ তার খেলায় তেমন কোনো টেকনিক নাই। যা আছে তা হলো গতিবান খেলোয়াড়দের ব্যবহার করে প্রতিপক্ষকে মুচড়ে ফেলা। সে ভাগ্যবান তার সময়ে একঝাক গতিবান ও সামর্থ্যবান খেলোয়াড় পেয়েছে। তাহলে দেশেম কেন গ্রায়েতের এতো প্রিয়? দেশমের খেলার টেকনিকের প্রশংসা করে এখন পর্যন্ত কোনো এনালিস্টকে লিখতে দেখিনি।  একবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ান আরেকবার রানারআপ হওয়ার পরেও যার টেকনিক নিয়ে না ফিফার বিশেষজ্ঞ টিম, না ফুটবল পন্ডিত কারো আলোচনা নাই, সেই ব্যক্তিকে নিয়ে গ্রায়েতের উচ্ছ্বাসা এবং জিদানকে পুরো রিজেক্ট করে দেওয়া ফুটবল বিশ্বকে মর্মাহত করলেও ফ্রান্সে এটাই বাস্তবতা।।

এই বাস্তবতার পেছনে আছে জাতিগত কিংবা রেসিয়াল সুপ্রিমেসির সুক্ষ দ্বন্ধ। গ্রায়েত যে দেশমকে এতো হাই সার্টিফিকেট দিয়ে জিদানকে রিজেক্ট করে দিলো সেই দেশম এথনিকালি জাতিগত ফ্রেঞ্চ। আর জিদান এমিগ্রান্ট ফ্রেঞ্চ তার রুট আফ্রিকায়। ফ্রেঞ্চ সমাজ ও ফুটবলে এই ক্ষত মোটামুটি সবাই জানে। তাই তো এমিগ্রান্ট পরিবারের সন্তান এমবাপ্পে, কিংবা থিয়েরি অরি অথবা ডিওরকায়েফ জিদানকে অপমানের ব্যাপার যতোটা উচ্চকিত ঠিক ততোটা নয় এথনিকালি ফ্রেঞ্চ জিরুদ কিংবা গ্রিয়েজম্যান। সেই একই ক্ষততেই বারবার আহত হয়েছে বেনজেমা। কারণ সেও এমিগ্রান্ট ফ্রেঞ্চ। লঘু পাপে গুরু দন্ড দিয়ে দেশম তার ক্যারিয়ারের পিকে থাকা অবস্থায় জাতীয় দলে অঘোষিত নিষিদ্ধ করে রেখেছিলো। মিডিয়া ও সমর্থকদের চাপে নেশন্স লিগে দলে নিতে বাধ্য হলেও বিশ্বকাপে মাইনর ইঞ্জুরির অজুহাতে বাদ দিয়ে দিলো। যদি বেনজেমা কোয়াটার ফাইনাল থেকে পরের ম্যাচগুলো খেলার জন্য ফিট ছিলো। এই দুঃখে বেনজেমা অবসর নিয়ে ফেললো জাতীয় দল থেকে আর সব সতীর্থকে আনফ্রেন্ড করে দিলো। যদিও পরে তার মতো এমিগ্রেন্ট খেলোয়াড়দের আবার ইন্সটায় ফলোব্যাক দিলো কিন্তু জিরুদ, গ্রিয়েজম্যানদের সাথে সম্পর্ক ছিন্নই রইলো। এই জাতিগত বিভেদ একটু খেয়াল করলেই বুঝা যায়।

লেকিপ অনেকবার লিখেছে ফ্রান্স দলে নাকি সতীর্থরা বেনজেমাকে চায় না। তারকা খ্যাতিতে বেনজেমা এমবাপ্পের পরপরই। এমবাপ্পে বেনজেমাকে চায় তাহলে চায় না কে? গ্রিয়েজম্যান, জিরুদ? কারণ বেনজেমা খেললে তাদের খেলার স্পেস কমে যায়। শুধু এথনিকালি ফ্রেঞ্চ হওয়ায় জিরুদ দিনের পর দিন দেশমের দলে চান্স পায় এমন একটা কথা ফুটবল দুনিয়ায় ঘুরে। এথনিকালি ফ্রেঞ্চ দেশম ও গ্রায়েতের এই বন্ধন এবং জিদানকে অপমান আসলে ফ্রেঞ্চ সমাজ ও ফুটবলের জাতিগত দ্বন্ধটাইকে সারফেস করেছে মাত্র। ফেসবুক থেকে